• সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জৈষ্ঠ ১৪২৯

সারা দেশ

মানুষের জন্য নয়, গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ভুট্টার আবাদ বেড়েছে নেত্রকোনায়

  • ''
  • প্রকাশিত ২১ মার্চ ২০২৪

নেত্রকোনা প্রতিনিধি:

দিনদিন চাষের আওতায় আসছে যুগযুগ ধরে পতিত থাকা হাওরের অনাবাদী জমি। তাতে উৎপাদিত হচ্ছে মিষ্টি কুমড়াসহ নানা রকমের শাক-সবজি। আর এ কারণে কমছে গো-চারণ ভূমি। ফলে দেখা দিচ্ছে গবাদিপশুর খাদ্য সঙ্কট। আর এ সংকট মোকাবেলায় হাওরের চাষিরা ঝুঁকছেন ভুট্টা আবাদে। মানুষের জন্য নয়, গবাদিপশুর খাদ্যের যোগান দিতেই তারা করছেন ভুট্টার চাষ।

স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে, এ বছর নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলের ২ শত ১০ হেক্টর জমিতে প্রায় ১০ হাজার ৫ শ মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদন হবে। যার বাজার মূল্য দাঁড়াবে ১০ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ ভুট্টার গাছ ব্যবহৃত হবে গো-খাদ্য হিসেবে। বাম্পার ফলন ও বাজার মূল্য ভালো হওয়ায় লাভের আশা গুনছেন চাষিরা। নেত্রকোনা থেকে জাহিদ হাসান’র প্রতিবেদন।

বছরের পর বছর ধরে পতিত ছিল নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলের হাজার হাজার হেক্টর জমি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এসব পতিত জমিকে চাষের আওতায় আনতে কৃষকদের উৎসাহিত করে কৃষি বিভাগ। ফলে আস্তে আস্তে বেড়েছে ভুট্টার আবাদ। চলতি ভুট্টা আবাদের মৌসুমে গিয়ে দেখা গেছে, এক সময়ের গো-চারণ ভূমিগুলো হয়ে ওঠেছে সবুজ গালিচা।

মদন উপজেলার বালালি বাঘমারা গ্রামের ফজলুর হক তালুকদারে পুত্র ভুট্টা চাষি, জহিরুল হক তালুকদার বলেন, তলার হাওরে প্রায় ১ শত বছরের পতিত- অনাবাদী ১ (এক) শত ২৫ কাঠা অর্থাৎ ৫ পাঁচ হেক্টর জমি চাষ করে ভুট্টা আবাদ করেছেন। পাশাপাশি ২ একরে করেছেন মিষ্টি কুমড়াও। ফলন ও বাজার মূল্য ভালো। প্রতি কাঠা জমিতে ২ মেট্রিক টন করে ভুট্রা গো-খাদ্য (গরুর গাস) উৎপাদন হচ্ছে। প্রতি কেজি ১০ টাকা থেকে ১২ টাকা হারে গড়ে প্রতিটন ১০ হাজার টাকায় বাজারজাত করা যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, তার এই পরিমান জমিতে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকার ২ শত ৫০ মেট্রিক টন ভুট্টার উৎপাদন হবে।

আশা করছেন, এ পর্যন্ত প্রায় ৬ লক্ষ টাকা ব্যয বাদে আয় থাকছে ১৯ লক্ষ টাকার মতো। ভুট্টা আবাদে বেশি শ্রম যেমন প্রয়োজন হয় না, তেমনি জাতিভেদে সময় অনুযায়ী পরিমাণ মতো ফসফেট, ড্যাপ, ইউরিয়া ও জিপ-সাম সার ব্যবহার করলেই হয়। আর এতে বীজ ও সারসহ ভুট্টা উৎপাদনে তেমন একটা খরচ হয় না। এবার তেমন একটা রোগবালাইও দেখা যায় না ভুট্টা ক্ষেতে। এদিকে মদন-ফতেপুর-বালালি বাঘমারা- ছত্রমপুর সড়ক পাকাকরন এবং বালই নদীর উপর ব্রিজ না থাকার কারণে তলার হাওরের হাজার হাজার হেক্টর জমিতে উৎপাদিত বোরো ফসল ও ভুট্রা, মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি বাড়িতে আনা-নেয়াসহ বাজারজাত করতে গিয়ে হাওর এলাকার চাষিরা চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে। যে কারণে তারা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যার্য দাম পারছেনা। তাদের দাবি বালই নদীতে একটি ব্রিজ নির্মাণসহ রাস্তাটি পাকা করণ ।

একই গ্রামের ভুট্টা চাষি, প্রবাসী হারুনুর রশিদ বাংলাদেশের খবরকে জানান, ৯ নয় মাস আগে দেশে এসে ৪০ টি গরু সমন্বয়ে একটি ফার্ম গড়ে তোলেন তিনি। গো-খাদ্য সংকট নিরসনে পরিকল্পনা মতো বাড়ি সামনে ৩০ শতক জমিতে ভুট্রা আবাদ করেন। ফলন ও বাজার মূল্য বাম্পার হওয়ায় ৫০ কেজি বস্তায় ১ শত বস্তা ভুট্টা কমপক্ষে ৬০ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। এছাড়া বন্ধু জহিরুল হক তালুকদারকে নিয়ে ১০ একর পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় এনে ভুট্টার আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন তারা। তিনি আরো বলেন, ভুট্টা যেমন সহজে সংরক্ষণ করা যায়, তেমনি গবাদি পশুও তা খেতে পছন্দ করে। বাজার থেকে কেনা অন্যান্য খাবারের বদল গবাদিপশুকে ভুট্টা খেতে দিলে তাদের শারীরিক গঠন ভালো হয়। শক্তি পায়। সহজে নিস্তেজ হয় না, রোগ-বালাইও কম হয়। অন্যদিকে গবাদিপশুর খাদ্য বাবদ খরচও তুলনামূলক কম পড়ে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ি নেত্রকোনা উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ: নুরুজ্জামান জানান, এ বছর নেত্রকোনায় ৩ শত ৩৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ করা হয়েছে। আর হাওরাঞ্চলে ২ শত ১০ হেক্টর পতিত জমিকে আনা হয়েছে ভুট্টা চাষের আওতায়। বাম্পার ফলন হওয়ায় আশা করা হচ্ছে শুধু হাওরাঞ্চল মদন ও খালিয়াজুড়িতে ১০ হাজার ৫ শত মেট্রিকটন ভুট্টার উৎপাদন হবে । যার বাজার মূল্য দাঁড়াবে প্রায় ১০ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। জেলায় এবার ১১ হাজার ৭ শত ৪৮ মেট্রিক টন ভুট্টার উৎপাদন হবে। আগামীতে ভুট্টা চাষ আরো বাড়ানো হবে বলে জানান এ কৃষি কর্মকর্তা।

মদন উপজেলা কৃষি কর্মকতা হাবিবুর ধান ও গমের থেকে ভুট্টাতে পুষ্টিমান অনেক বেশি। এটি মানুষের জন্য বেশ উপকারী। এছাড়া ভুট্টার বহুমুখী ব্যবহার থাকলেও দেশে পোল্ট্রি ও মাছের খাবার হিসেবে এর ব্যবহার বেশি হয়ে থাকে। সেই সঙ্গে বর্তমানে গো-খাদ্য হিসেবেও ভুট্টা ব্যবহার বেড়েছে। নেত্রকোনার হাওরাঞ্চল মদনে পতিত অনাবাদী হেক্টরের পর হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় এনে গো-খাদ্য হিসেবে অনেকেই ভুট্টার আবাদ করছেন। ফলে এ অঞ্চলেও ভুট্টা চাষ বাড়ছে জানিয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তা।


হাওরের পতিত জমিসহ জেলার ভুট্টা চাষ উপযোগী জমিতে ভুট্টা চাষ বাড়ালে মানুষের খাদ্যের পাশাপাশি মিটবে গবাদিপশুরও খাদ্যের চাহিদা। আবার ফলনও হবে বাম্পার। এমনটাই ধারণা স্থানীয়দের। জাহিদ হাসান, নেত্রকোনা প্রতিনিধি তারিখ ২০মার্চ ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads